ভারতের ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তেজগাঁওয়ে কোহিমা এবং অন্যান্য যুদ্ধক্ষেত্রের লক্ষ্যে সামরিক বিমান পরিচালনার জন্য এয়ার স্ট্রিপ তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়াও তেজগাঁও বিমানবন্দর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বেসামরিক বিমান চলাচলের প্রথম বিমানবন্দর হয়ে ওঠে এবং এটি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একটি স্টেশনও ছিল।

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ঢাকায় রয়্যাল ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স (RIAF) স্টেশন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ১৯৪১ সালে দাইনোদ্দা নামে একটি স্থানে তেজগাঁও বিমানবন্দর নির্মাণ শুরু হয় এবং একই সময় কুর্মিটোলায় (বালুরঘাট) একটি ল্যান্ডিং স্ট্রিপ নির্মাণ শুরু হয়। তেজগাঁও এবং কুর্মিটোলার এয়ার স্ট্রিপগুলোতে সামরিক ফাইটার প্লেন অবতরণের সুবিধা ছিল এবং ব্রিটিশ বিমান বাহিনী তাদের বিমানকে নিরাপদে রক্ষণাবেক্ষনের জন্য ব্যবহার করে। যুদ্ধের সময় এখানে একটি আমেরিকান বিমান বাহিনীর সংযুক্তি ইউনিট ছিল। প্রথম RIAF হালকা ফাইটার বিমান ১৯৪৩ সালের শুরুতে তেজগাঁওয়ের নির্মাণাধীন রানওয়েতে অবতরণ করে এবং বিমানবন্দর সুবিধার উন্নয়নের পর এটি প্রথম বেসামরিক বিমানবন্দরে পরিণত হয়।

 

১৯৪৮ সালে, ইস্টার্ন পাকিস্তান ফ্লাইং ক্লাব প্রতিষ্ঠা করা হয়, যেন সরকার কর্তৃক স্থানীয় যুবকদের  পাইলটিং প্রশিক্ষন দেয়া যায়। ১৯৫৬ সালে, পূর্ব পাকিস্তানে উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিভাগের ফ্লাইং উইংয়ের একটি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। তেজগাঁও বিমানবন্দর ধীরে ধীরে এই সংস্থাগুলির পাশাপাশি পিআইএ থেকে ফ্লাইট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, যা ডাকোটাস এবং কনভায়ার্সের মতো পিস্টন ইঞ্জিনের বিমানগুলি অর্জন করেছিল এবং সুপার কন্সটেলেশন ফকারের মতো টার্বো প্রপেলার-টাইপ বিমানে রূপান্তরিত হয়েছিল। পরে বোয়িং, কমেট এবং ডিসি এর মতো জেট বিমান বহরে যুক্ত হয়। বিমানবন্দরটি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং প্যান আমেরিকান এয়ারওয়েজ সহ বিদেশী এয়ারলাইনগুলিকেও পরিষেবা প্রদান করে। পিআইএ ১৯৬০ সালে তার বোয়িং জেট পরিষেবা শুরু করে। বেসামরিক বিমান চলাচল অধিদপ্তর এবং বিমানবন্দর উন্নয়ন সংস্থাকে তেজগাঁও বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ট্রাফিক ব্যবস্থার জন্য আপগ্রেড করতে হয়েছিল। এই বিমানবন্দরটি একটি আধুনিক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে ব্যর্থ হতে শুরু করে। তাই ঢাকার কুর্মিটোলায় একটি নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং ফরাসি বিশেষজ্ঞদের কারিগরি সহায়তায় নতুন বিমানবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, ১৯৮০ সালে বিমানবন্দরের নির্মাণ কাজ শেষ হয় এবং অপারেশনাল কার্যক্রম তেজগাঁও থেকে কুর্মিটোলায় স্থানান্তরিত হয়। বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে  ২০১০ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণ করা হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা জিরো পয়েন্ট থেকে ১৭ কিলোমিটার উত্তরে কুর্মিটোলায় অবস্থিত।