বাংলাদেশ কাস্টমস জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনে কাজ করছে যা বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের রাজস্বের শীর্ষ সংস্থা। এনবিআর হল বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) প্রধান অঙ্গ। ঢাকা কাস্টম হাউস বাংলাদেশের বৃহত্তম বিমানবন্দর কাস্টমস স্টেশন। এটি ঢাকা শহরের উত্তর অংশ কুর্মিটোলায় অবস্থিত। এটি প্রাথমিকভাবে আমদানি পর্যায়ে সমস্ত শুল্ক এবং কর সংগ্রহ করে থাকে। সরকারী রাজস্ব সংগ্রহের পাশাপাশি এটি বিমানবন্দরের যাত্রী পরিষেবা, বাণিজ্য সুবিধা, সরকারী বিধি প্রয়োগ, সমাজ ও পরিবেশ সুরক্ষা, বৈদেশিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান তৈরি, বাণিজ্য সম্মতি এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সুরক্ষার দায়িত্বও পালন করে থাকে।


আকাশপথে আমদানিকৃত ও রপ্তানিকৃত পণ্যের শুল্ক আদায়ের পাশাপাশি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাধ্যমে আগত ও বর্হিগামী যাত্রীগণকে যাত্রী সেবা প্রদান ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধি বিধানের আলোকে শুল্ক কর আদায়সহ চোরাচালান নিরোধ করার জন্য কাস্টম হাউস, ঢাকা এর কমিশনারের অধীনে নিম্নোক্ত ৪টি শিফট এর মাধ্যমে ২৪/৭ (ঘন্টা/দিন) কার্যক্রম পরিচালনা করছে।


যাত্রী সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আকাশপথে আগত/বহির্গামী যাত্রী বিদ্যমান ব্যাগেজ রুলস সম্পর্কে অবগত থাকা আবশ্যক। নিম্নে পর্যায়ক্রমে বিদ্যমান বিধানসমূহ উল্লেখ করা হলো।


জরুরী যোগাযোগ: বিমানবন্দর কাস্টমস (Mike -14) ০১৩১৮৪৭৭৯৪১


ক) আকাশপথে একজন যাত্রী বিনা শুল্কে (ট্যাক্স) কি কি পণ্য সাথে আনতে পারবেন?


বিদেশ থেকে ব্যাগেজ সুবিধায় একজন যাত্রী নিম্নে বর্ণিত ০১টি করে পণ্য বিনা শুল্কে (ট্যাক্স) সাথে আনতে পারবেন: [তফসিল-৩]*

  • ক্যাসেট প্লেয়ার/টু-ইন-ওয়ান
  • সিডি প্লেয়ার
  • ডিস্কম্যান/ওয়াকম্যান (অডিও)
  • ডেস্কটপ/ল্যাপটপ কম্পিউটার (একটি UPS সহ)
  • কম্পিউটার স্ক্যানার
  • সাধারণ ও বৈদ্যুতিক টাইপরাইটার
  • প্রিন্টার, ফ্যাক্স মেশিন, টেলিফোন সেট
  • ভিডিও ক্যামেরা (Hd Cam, DV Cam, BETA Cam যেমন পেশাদারি কাজে ব্যবহৃত হয় এরূপ ক্যামেরা ব্যতীত) স্টিল ক্যামেরা/ডিজিটাল ক্যামেরা, ওভেন রাইস কুকার/প্রেসারকুকার/গ্যাস ওভেন (বার্নারসহ)
  • টোস্টার/স্যান্ডউইচ মেকার/ব্লেন্ডার/ফুড প্রসেসর/জুসার/কফি মেকার
  • গৃহস্থালি সেলাই মেশিন
  • টেবিল/প্যাডেস্টাল ফ্যান/গৃহস্থালি সিলিং ফ্যান
  • স্পোর্টস সরঞ্জাম (ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য)
  • ১০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালংকার ও ২০০ গ্রাম ওজনের রৌপ্য অলংকার (এক প্রকার অলংকার ১২ টির অধিক হবে না)

খ) একজন যাত্রী কর্তৃক শুল্ক-করাদি (ট্যাক্স) দিয়ে (জরিমানা ব্যতিরেকে) কি কি পণ্য আনা যাবে?


গ। যাত্রীর সাথে আনা হয়নি এমন ব্যাগেজ খালাসে করণীয়ঃ


সঙ্গে আনা হয়নি এমন ব্যাগেজ (Unaccompanied Baggage) বিধিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে যথাযথ ঘোষনা প্রদান করে বিনা শুল্কে (ট্যাক্স) ছাড় করা যাবে। ঘোষণা ফর্ম (তফসিল-১) বিমান অবতরণের পূর্বে বিমানে যাত্রিদের দেয়া হয়ে থাকে, অথবা কাস্টমস হলেও পাওয়া যায়।


ভূলবশতঃ বা অনিবার্য কারণে কাস্টমস হল ত্যাগের পূর্বে উক্ত ঘোষণা দেয়া সম্ভব না হলে যাত্রীর আগমনের ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে এয়ারপোর্ট সংলগ্ন কাস্টমস হাউজ, ঢাকায় ঘোষণা দিতে হবে। উক্ত ব্যাগেজ খালাশের সময় ঘোষণাপত্রের একটি অনুলিপি এয়ারপোর্ট কাস্টমস কর্মকর্তার নিকট দাখিল করতে হবে।


ঘ। স্বর্ণ বহনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাঃ


একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ১১৭ গ্রাম বা ১০ তোলা স্বর্ণ  কাস্টমস হলে ঘোষণা দিয়ে নিন্ম বর্ণিত শুল্ককরাদি দিয়ে নিয়ে যেতে পারবেনঃ


প্রতি ১১.৬৬৪ গ্রাম স্বর্ণের শুল্ক ট্যাক্স = ৪০০০/- টাকা

প্রতি ১১৭ গ্রাম স্বর্ণের শুল্ক ট্যাক্স        = ৪০০০০/- টাকা


১১৭ গ্রামের অতিরিক্ত যেকোন পরিমান স্বর্ণ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাজেয়াপ্ত /আটক করা হবে। ঘোষণা ছাড়া যেকোন পরিমান স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিন্ড অথবা খাদ ছাড়া স্বর্ণ বহন সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। ঘোষণা বিহীন স্বর্ণ বহনকারী যাত্রীকে আটক করে গ্রেফতার পূর্বক ফৌজদারী মামলা দায়ের করে নিকটস্থ থানায় সোপর্দ করা হবে।


ঙ। সিগারেট বহনের ক্ষেত্রে নির্দেশনাঃ 


একজন যাত্রী তার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ১ কার্টন বা ২০০ শলাকা সিগারেট বহণ করতে পারবেন। ১ কার্টন/২০০ শলাকার অতিরিক্ত যেকোন পরিমান সিগারেট বা যেকোন পরিমান Vape অথবা Liquid Nicotine কাস্টমস কর্তৃক বাজেয়াপ্ত/আটক (Detain) করা হবে।


চ। মদ (Liquor) জাতীয় পানীয় বহনের ক্ষেত্রে নির্দেশনাঃ


কোন বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী ব্যক্তি মদ জাতীয় পানীয় বহন করতে পারবেন না। এরূপ আনীত সকল মদ জাতীয় পানীয় কাস্টমস কর্তৃক বাজেয়াপ্ত/আটক (Detain) করা হবে। তবে একজন বিদেশী পাসপোর্টধারী যাত্রী এক লিটার পর্যন্ত মদ বা মদ্য জাতীয় পানীয় (যেমনঃ স্পিরিট, বিয়ার ইত্যাদি) বিনা শুল্কে আনতে পারবেন।


ছ। মোবাইল সেট বহনের ক্ষেত্রে নির্দেশনাঃ

একজন যাত্রী সর্বোচ্চ ২ (দুই)টি ব্যবহৃত মোবাইল ফোন শুল্ক ও কর পরিশোধ ব্যতিরেকে আমদানি করিতে পারিবেন এবং তফসিল-২ অনুযায়ী শুল্ক ও কর পরিশোধ সাপেক্ষে, ১ (এক)টি নূতন মোবাইল ফোন আমদানি করিতে পারিবেন, তবে ইহার অতিরিক্ত আমদানিকৃত মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে বিধি ১০ ও অন্যান্য প্রচলিত বিধিবিধান প্রযোজ্য হইবে।


জ। যাত্রীর সাথে বহন করা অতিরিক্ত পণ্যের ক্ষেত্রে নির্দেশনাঃ


বাণিজ্যিক বিবেচিত না হলে শুল্ককরাদি/ট্যাক্স প্রদান সাপেক্ষে বহনকৃত পণ্য ছাড়যোগ্য। তবে, বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে আনীত যেকোন পরিমান পণ্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাজেয়াপ্ত/আটক (Detain) করা হবে।


ঝ। ল্যাপটপ/কম্পিউটার বহনের ক্ষেত্রে করণীয়ঃ


একজন যাত্রী একটি পুরাতন/নতুন ল্যাপটপ/কম্পিউটার তার সাথে করে আনতে পারবেন।


ঞ। আগ্নেয়াস্ত্র বহনের ক্ষেত্রে নির্দেশনাঃ


যাত্রীকর্তৃক সকল প্রকার আগ্নেয়াস্ত্র বহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। তবে, বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে একজন যাত্রী ৫০০০/- টাকা শুল্ক দিয়ে একটি এয়ারগান/এয়ার রাইফেল বহন করতে পারবেন।


ট। বৈদেশিক মুদ্রা আনা/নেয়ার ক্ষেত্রে নির্দেশনাঃ


আগমনী যাত্রী যেকোন পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশ থেকে সাথে করে আনতে পারবেন।  তবে, ১০,০০০/ মার্কিন ডলার বা সমপরিমান বৈদেশিক মুদ্রার  অধিক বিদেশ হতে আনা হলে কাস্টমস হলে FMG ফর্ম পূরণ করে ঘোষণা দিতে হবে। বহির্গমন যাত্রীর ক্ষেত্রে পাসপোর্টে এনডোর্স করে  বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যেতে হবে।


কাস্টমস নির্দেশনা ফাইল: