ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৭ হাজার যাত্রী চলাচল করেন। ২০২৩ সালে প্রায় ৫০ হাজার ফ্লাইট ওঠানামা করেছে এ বিমানবন্দর থেকে। আকার-আয়তন ও যাত্রী ধারণের সক্ষমতার দিক দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর এটি। গত কয়েক বছরে বিমানবন্দরে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া, দৃষ্টিনন্দন ইন্টেরিয়রের মাধ্যমে সেজেছে নতুন আঙ্গিকে।

২০২৪ সালের শেষভাগে চালু হচ্ছে এই বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল; তখন আরও পরিপূর্ণতা পাবে। ২০২২ সালের এপ্রিলে বিমানবন্দরটির নির্বাহী পরিচালক ও প্রধানের দায়িত্ব নেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম, বিএসপি, বিপিপি, এসিএসসি, পিএসসি, পিএইডি। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে বিমানবন্দরে হেল্প ডেস্ক স্থাপন, ফ্যাসিলিটেশন প্রশিক্ষণ, ওয়েবসাইট, হটলাইন চালুর মতো যাত্রীবান্ধব নানা উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। বিমানবন্দর রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল করতে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

সম্প্রতি বিমানবন্দরের নানা বিষয় নিয়ে ঢাকা পোস্টের মুখোমুখি হন গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাকা পোস্টের প্রধান প্রতিবেদক আদনান রহমান।

ঢাকা পোস্ট : দেশের সর্ববৃহৎ বিমানবন্দরের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্ব পালনের জন্য আপনাকে অভিনন্দন। একটি দেশ কেমন সেটির সম্পর্কে প্রথম ধারণা পাওয়া যায় দেশটির বিমানবন্দর দেখে। ঢাকার এই বিমানবন্দরটিতে গত ৫ বছরে কী কী উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে? বিমানবন্দরকে স্মার্ট করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?

গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম : বিমানবন্দর নিঃসন্দেহে জীবনের অনেক অবিস্মরণীয় অ্যাডভেঞ্চারের প্রবেশদ্বার। প্রিয়জনকে বিদায় দিতে, প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করার আনন্দে, কাজের প্রয়োজনে, চিকিৎসা বা শিক্ষা সব অনুভূতির সঙ্গে বিমানবন্দর জড়িয়ে আছে। ‘সম্মানিত যাত্রী সর্বাগ্রে’, এ মূলমন্ত্রকে ধারণ করে যাত্রীদের ভ্রমণ সুন্দর ও আরামদায়ক করার প্রয়াসে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের ২০৪১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উন্নত, আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্মত যাত্রী সেবা নিশ্চিতকরণে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহায়তা এবং পৃষ্ঠপোষকতায়, মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনায়, বেবিচক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সরকারি বেসরকারি ৩৭টি এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছে।

বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান, ৩৭টি এয়ারলাইন্সসহ অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে ৩০ হাজার আন্তর্জাতিক যাত্রী ও ৭ হাজার অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। ২০২৩ সালে প্রায় ৯৪ লাখ যাত্রী এ বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ও বিদেশে যাতায়াত করেছেন।
বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে যাত্রীদের জন্য এস্কেলেটর ও লিফটসহ বসার লাউঞ্জের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটি বেবি কেয়ার সেন্টারের কাজ চলমান। দক্ষিণ এশিয়ায় এই প্রথম হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে সংযুক্ত হয়েছে ২৬টি ই-গেট। মুজিব কর্নার, মুজিব ম্যুরাল প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং তৃতীয় টার্মিনালের কার্যক্রম চলমান; যা এ বছরেই চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগে স্বর্ণের শুল্ক পরিশোধ করতে যাত্রীদের আগমনী হলের অন্যত্র যেতে হতো। বর্তমানে যাত্রীরা একই স্থানে স্বর্ণের শুল্ক দিতে পারবেন। একই স্থানে চালান ও ব্যাংকে অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিমানবন্দরে বর্তমানে প্রায় ৩৭টি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চলাচল করছে। আরও ৪টি এয়ারলাইন্স তাদের নিয়মিত ফ্লাইট চলাচলের জন্য ইতোমধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে। এতে দেশে আর্থিক খাতে আরও বেশি অবদান রাখা সম্ভব বলে আমি মনে করি।

এছাড়াও বিমানবন্দরের ২টি টার্মিনাল ভবনের সীমিত পরিসরের রিসোর্স দিয়ে বর্তমানে গড়ে প্রায় ১৭০টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল করছে। এই সীমিত পরিসরে ফ্লাইট ব্যবস্থাপনা নির্বিঘ্ন ও অবিচ্ছিন্ন রাখতে ‘ফ্লাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে। এছাড়াও টাওয়ারের অপারেশনাল কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে বার্ডস মনিটরিং সিস্টেম, রাডার ও ভিসিসিএস-এর মতো অত্যাধুনিক ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে এবং চলমান রয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়াতে এভসেক আইডি পাস সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

ঢাকা পোস্ট : বিমানবন্দরে যাত্রীদের ইতিবাচক অভিজ্ঞতা দিতে কোন কোন নতুন পদক্ষেপ নিয়েছেন?

গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম : আগে বিমানবন্দরে অবতরণ করার পরে যাত্রীদের লাগেজ বিলম্বে পাওয়ার/লেফট বিহাইন্ড লাগেজের অনেক অভিযোগ ছিল। বর্তমানে এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে যেসব এয়ারলাইন্সের অতিরিক্ত লেফট বিহাইন্ড হয় তাদের আগমনী সিটের ক্যাপাসিটি কমিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সসমূহের সার্বিক সহযোগিতায় লাগেজ লেফট বিহাইন্ড সমস্যা অনেকটা উন্নতি করা হচ্ছে। বর্তমানে ৯৯.৮০% লাগেজ যাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

বিমানবন্দরে অবতরণ করার পরে যাত্রীদের লাগেজ পেতে বিলম্ব হওয়ার অনেক অভিযোগ ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে এসেছে। বর্তমানে এ  সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে এক ঘণ্টা বা তার কম সময়ে যাত্রীদের কাছে লাগেজ ডেলিভারি নিশ্চিত করা হচ্ছে। লাগেজ ডেলিভারি পেতে সমস্যার সম্মুখীন হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি কর্তৃক তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রায় ৮০% যাত্রীর কাছে ১৫ মিনিট থেকে ৫৫ বা ৬০ মিনিটের মধ্যে লাগেজ ডেলিভারি নিশ্চিত করা হয়েছে।

যাত্রীদের ট্রলি সংকট সমাধানের জন্য আমরা ইতোপূর্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। বর্তমানে পর্যাপ্ত ট্রলি রয়েছে। এমনকি ক্যানোপি থেকে বের হয়ে ট্রলি নিয়ে বহুতল পার্কিং ও রাস্তার পূর্ব পর্যন্ত যাওয়ার ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় সাইনেজ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

যাত্রীদের যাত্রা সুন্দর ও আরামদায়ক করার প্রয়াসে ৫টি হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ফ্রি টেলিফোন বুথ, ফ্রি ইন্টারনেট। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ও যাত্রীদের আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের সেবা প্রদানের জন্য বিমানবন্দরকে ডিজিটাল করার লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বিমানবন্দরে একটি ওয়েবসাইট, কল সেন্টার, মোবাইল অ্যাপ ও সিআরএম সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি ওয়েব পোর্টাল রয়েছে যাতে যাত্রীরা যে কোনো সহায়তা সহজেই পেতে পারেন। কোনো অভিযোগ জানিয়ে দ্রুত সমাধান পেতে পারেন। ২৪ ঘণ্টা হটলাইন কল গ্রহণের মাধ্যমে এই সেবা প্রদান অব্যাহত থাকবে। এছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (হশাআবি) মোবাইল অ্যাপ চালু রয়েছে।
যেখানে যাত্রীরা সহজেই বিমানবন্দরের ভেতরে দিকনির্দেশনামূলক নির্দেশনা পাবেন। এছাড়া ফ্লাইট সম্পর্কিত তথ্যের পাশাপাশি বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ নানা তথ্য, যেমন– ব্যাগেজ রুলস, শুল্কযুক্ত পণ্যের তথ্য, হশাআবির ম্যাপ, বিমানবন্দরে অপারেশনাল এয়ারলাইন্সের তথ্য ও টিকিট বুকিং সেবা, সাইনেজ পরিচিতি, প্রবাসী ডেস্ক সেবা, গন্তব্য দেশের অবতরণের পূর্বে সঠিক নিয়ম কানুন সম্বলিত সেবা, তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা, হারিয়ে যাওয়া লাগেজ সেবা, হুইল চেয়ার সেবা, ফ্রি টেলিফোন ও ইন্টারনেট কানেকশন সেবা সম্বলিত সকল তথ্য এ অ্যাপে পাবেন যাত্রীরা।
 
ঢাকা পোস্ট : বিমানবন্দরে কর্মরতদের ফ্যাসিলিটেশন কোর্স করানো হচ্ছে। এর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাই...

গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম : যাত্রীদের সঙ্গে বিমানবন্দরে কর্মরত সকল সংস্থার সদস্যদের দ্বারা অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়াতে এবং আন্তর্জাতিক মানসম্মত যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে ‘প্যাসেঞ্জার সার্ভিস অ্যান্ড ফ্যাসিলিটেশন ইন সিভিল এভিয়েশন’ নামে কোর্স চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই কোর্সের ২৩টি সেশন সম্পন্ন হয়েছে। বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার প্রায় ৬৫০ জন সদস্য এই কোর্সে অংশগ্রহণ করেছে।

ঢাকা পোস্ট : বিমানবন্দরে মশার উপদ্রবের অভিযোগ পাওয়া যায় প্রায়ই। মশক নিধনে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম : বর্তমানে ২ মাস পরপর সেন্টার ফল ডিজিজ কন্ট্রোল এবং প্রেভেনশন (সিডিসি) বিমানবন্দরে মশার লার্ভার অনুসন্ধানের জন্য জরিপ করে। গত কয়েকটি জরিপে বিমানবন্দর এলাকায় কোনো লার্ভা পাওয়া যায়নি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে বিমানবন্দর এবং আশেপাশে এলাকাতেও মশক নিধন অভিযান চালানো হচ্ছে।

মশার উপদ্রব কমাতে বিমানবন্দর অভ্যন্তর এলাকায় খাল ও পুকুরগুলোকে নিয়মিত ও যথাযথভাবে পরিষ্কার করা হচ্ছে। বিমানবন্দর এয়ার ও ল্যান্ড সাইডের বিভিন্ন খাল ও পুকুরে গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সকালে ও বিকালে লার্ভিসাইড স্প্রে কার্যক্রম ও বিকেলে ইন্সেক্টিসাইড স্প্রে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

ঢাকা পোস্ট : বিমানবন্দরের হেল্প ডেস্ক চালু করার পরিকল্পনাটি কতটুকু সফল হয়েছেন বলে মনে করেন। কোন ধরনের সমস্যা/অনুসন্ধানের বিষয়ে যাত্রীরা বেশি হেল্প ডেস্কে আসে?

গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম : বিমানবন্দরে আগমন ও বহির্গমন এলাকায় যাত্রীদের তথ্য ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার লক্ষ্যে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। দেশ ও বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা বিমানবন্দরে প্রবেশের পরে অনেক সময় সাইনেজ বুঝতে না পারায় সমস্যায় পড়েন। এই পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে আগমনী এলাকায় ২টি এবং বহির্গমন এলাকায় ৩টি হেল্প ডেস্ক স্থাপনের মাধ্যমে ৫৪ জন সহকর্মী ২৪ ঘণ্টা বিনামূল্যে যাত্রীদের বিভিন্ন তথ্য ও দিকনির্দেশনা প্রদান করে যাচ্ছেন।

ঢাকা পোস্ট : আরও ১২টির মতো বিদেশি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে আসার আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের এই আগ্রহের মূল কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম : বাংলাদেশের এভিয়েশন খাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এছাড়াও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে এভিয়েশন হাব করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার অংশীদার হতেই এতোগুলো এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে আমি মনে করি। এছাড়া বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে তা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্ভাবনা আরও অধিকতর বৃদ্ধি পাবে।

ঢাকা পোস্ট : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কতটুকু প্রবাসীবান্ধব। নানা সময় প্রবাসীদের নানা ধরনের সমস্যার কথা শোনা যায়। এগুলো সমাধানে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম : ‘লেফট বিহাইন্ড লাগেজ’, লাগেজ ডেলিভারিতে বিলম্বের মতো সমস্যা নিয়ে নানা সময়ে প্রবাসীদের অভিযোগ ছিল। বর্তমানে এই সমস্যা সমাধানের জন্য যেসব এয়ারলাইন্সের অতিরিক্ত লেফট বিহাইন্ড হয় তাদের আগমনী সিটের ক্যাপাসিটি কমিয়ে আনা হয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে সমন্বয় করে লাগেজ ডেলিভারি নিশ্চিত করা হচ্ছে। এছাড়া, অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়াতে এবং আন্তর্জাতিক মানসম্মত যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে ফ্যাসিলিটেশন কোর্স চালু করা হয়েছে। এতে ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।

ঢাকা পোস্ট :  প্রায়ই বিমানবন্দরে বার্ড স্ট্রাইকের বিষয়ে শোনা যায়। পাখির সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স নানা সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাখি নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দর কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে?

গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম : বার্ড স্ট্রাইক প্রতিরোধে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও নিকটবর্তী এলাকায় ‘একটিভ’ ও ‘প্যাসিভ’ এই দুই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বার্ড শুটিং গান দিয়ে সপ্তাহে ৭ দিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এটি একটিভ পদ্ধতি। এছাড়াও কয়েকটি প্যাসিভ পদ্ধতির মাধ্যমেও পাখি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্যাস ক্যানন মেশিন। ফ্লাইট উড্ডয়ন এবং অবতরণের সময়ে বার্ডহিট রোধে উচ্চ শব্দের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী ও পাখি তাড়াতে গ্যাস ক্যানন মেশিন রয়েছে বিমানবন্দরে। উচ্চমান ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরাও রয়েছে। যা দিয়ে বার্ডহিট নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
দেশের এভিয়েশন ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বার্ড স্ট্রাইক প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে একটি গবেষণা কার্যক্রম বর্তমানে চলমান। যার মাধ্যমে বছরব্যাপী পাখিদের জাত, ধরন, বসবাস, প্রজনন ও আনাগোনা সম্পর্কে জানা যাবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এই গবেষণাটিতে প্রজেক্ট ইনভেস্টিগেটর হিসেবে তিনজন অধ্যাপক এবং দুজন সহযোগী অধ্যাপক ও একজন সমন্বয়ক রয়েছেন। এই গবেষণালব্ধ পরামর্শ অনুযায়ী বার্ড স্ট্রাইক প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঢাকা পোস্ট : অনেকেই জানে না বিমানবন্দরে ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা পাওয়া যায়। যাত্রীরা এটি কীভাবে চালু করবে?

গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম : বর্তমানে বিমানবন্দরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যাত্রীদের ফ্রি ওয়াই-ফাই সুবিধা দিতে কাজ করছে। যাদের কাছে বাংলাদেশি সিমকার্ড আছে তারা সরাসরি রেজিস্ট্রেশন করে ওটিপ্পি সংগ্রহ করে ফ্রি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে পারবেন। যাদের কাছে বাংলাদেশি সিমকার্ড নেই, তাদের জন্য ওটিপি সংগ্রহ করার ব্যবস্থা রয়েছে।

ঢাকা পোস্ট : অত্যাধুনিক তৃতীয় টার্মিনাল হলে যাত্রীরা আর কী কী অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন?

গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের কাজ এই বছরেই শেষ হবে। শিগগিরই যাত্রীরা তৃতীয় টার্মিনাল দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন। তৃতীয় টার্মিনালের আয়তন প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার যা প্রতি বছরে প্রায় ১২ মিলিয়ন প্যাসেঞ্জার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন। এছাড়াও এই টার্মিনালে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ১২৮টি বহির্গমন ও আগমনী ইমিগ্রেশন, ২৭টি ব্যাগেজ এক্সরে মেশিন, ৪০টি কেবিন এক্সরে মেশিন, ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১৬টি কনভেয়ার বেল্ট, ১১টি বডি স্ক্যানার, ১২৩০টি কার পার্কিং লট, লিফট, এসকেলেটর, মুভিং ওয়াকওয়ে থাকছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিমানবন্দরের প্যাসেঞ্জার হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বর্তমানে বছরে ৮ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২২ মিলিয়ন হবে। কার্গো হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বর্তমানে বছরে ২.৮৫ লক্ষ টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৮.২০ লক্ষ টন হবে এবং ইকোনোমিক গ্রোথ হবে ১৫.২৪%। এছাড়াও তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং আন্ডারগ্রাউন্ড টানেলের মাধ্যমে মেট্রোরেল যুক্ত হবে। যা যাত্রীদের ভ্রমণকে আরও সহজ এবং উপভোগ্য করবে।