ঢাকার খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা তৌফিক হাসান সম্প্রতি ‘মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সে' মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে আবিষ্কার করেন, তার একটি ব্যাগ নেই। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের হটলাইন নম্বরে ফোন করে কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি অভিযোগ জানান।

এরপর হটলাইনের অপারেটরের পরামর্শে তিনি নিজের নম্বর থেকে বিমানবন্দরের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড' শাখায় এসএমএস পাঠান। সেখানে থাকা সমন্বয়ক দলের একজন সদস্য ফিরতি কলে তাকে পরবর্তী করণীয় বুঝিয়ে দেন।

দুদিন পর লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড শাখা থেকে ফোন দিয়ে তার ব্যাগটি খুঁজে পাওয়ার তথ্য জানানো হলে তিনি ব্যাগটি নিয়ে যান। এ ঘটনায় বেশ উচ্ছ্বসিত হন তিনি।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রর নাগরিক শাহ আলী শাহজালালের ওয়েবসাইটে দেওয়া ই-মেইল ঠিকানায় যোগাযোগ করে জানতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশে পৌঁছে তিনি অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাবেন কিনা। সেখান থেকে তাকে ই-মেইলে জানিয়ে দেওয়া হয়, অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হয় না। ভিসা পাওয়ার জন্য তাকে আগেভাগে আবেদন করতে হবে। ভিসা নিয়ে তারপর আসতে হবে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা বাড়াতে এবং ভোগান্তি কমাতে ২০২৩ সালের ২৮ জুলাই একটি কল সেন্টার (০৯৬১৪০১৩৬০০) এবং একটি ওয়েবসাইট (www.hsia.gov.bd) এবং কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট (সিআরএম) সফটওয়্যার চালু করে সরকার।

তখন বলা হয়েছিল, যাত্রীরা বিমানবন্দরের বিভিন্ন সেবা, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, এয়ারলাইন্সসহ সব ধরনের হালনাগাদ তথ্য পাবেন ওয়েবসাইটে।

আর কল সেন্টারে ফোন করে যাত্রীরা সরাসরি অভিযোগ বা সমস্যার কথা জানাতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারবেন।

সিআরএম সফটওয়্যারের মাধ্যমে মাধ্যমে বিমানবন্দরের তথ্যসেবা, লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেবা, কোন এয়ারলাইন্সের কোন ফ্লাইট কখন ছেড়ে যাবে, কখন পৌঁছাবে তা যাত্রীরা ঘরে বসেই জানাতে পারবেন বলে সে সময় জানানো হয়।

পরে কল সেন্টারের শর্ট কোড ১৩৬০০ নম্বরটি হটলাইন নম্বর হিসেবে চালু করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, যে হটলাইন এবং ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছিল, এগুলোতে ২০২৫ সালের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত দেড় বছরে প্রায় ২০ হাজারের বেশি জিজ্ঞাসা এবং অভিযোগ এসেছে। যার মধ্যে অধিকাংশই সমাধান করা করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষের দাবি।


এসব অভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৩০ শতাংশ অভিযোগ এসেছে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড বিভাগে। অর্থাৎ, যাত্রীদের মালামাল হারানোর অভিযোগই সবচেয়ে বেশি।

আর, ফ্লাইট সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা এসেছে প্রায় ১৫ শতাংশ; ইমিগ্রেশন, এয়ারপোর্ট, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, অন্যান্য এয়ারলাইন্সের সেবা মিলিয়ে জিজ্ঞাসা এসেছে ১০ শতাংশের মত।

ভিসা সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা এসেছে ১০ শতাংশ, বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সম্পর্কিত জিজ্ঞাসা এসেছে প্রায় ৭ শতাংশ, আর বাদবাকি অংশ নানাবিধ জিজ্ঞাসার।

শাহজালাল বিমানবন্দরেরর নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এসব অভিযোগ বা জিজ্ঞাসার মধ্যে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৯৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। আর শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ অভিযোগের কোনো সমাধান দেওয়া সম্ভব হয়নি।

“যেসব ইস্যু তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান সম্ভব হয় না, সেসব ক্ষেত্রে সমাধানের জন্য আমরা একটি সমন্বয়কারী টিম চালু করেছি। যারা সমস্যা সংশ্লিষ্ট বিভাগে গিয়ে ২৪ ঘণ্টা বিভিন্ন ইস্যু সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে।"



অভিযোগ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কল সেন্টারে যখন কেউ কোনো জিজ্ঞাসা বা অভিযোগ করে সেটি তো সরাসরি করা যায়।আর, ওয়েবসাইট ব্যবহার করে করলে তখন অভিযোগের বিপরীতে ফোনে ক্ষুদে বার্তা এবং ই-মেইলের মাধ্যমে অভিযোগকারীকে একটি ট্র্যাকিং নম্বর দেওয়া হয়। সেই ট্র্যাকিং নম্বর দিয়ে অভিযোগকারী পরবর্তী আপডেট নিজেই তদারকি করতে পারেন।"

কামরুল ইসলাম বলেন, “বিমানবন্দরের মত বড়ো জায়গায় নানা ধরনের অভিযোগ আসে। আগে অভিযোগের পাহাড় জমা হয়ে থাকত, এখন চাইলেই যে কেউ দেশে বা বিদেশ থেকে ফোন করে কল সেন্টার থেকে সেবা নিতে পারছে বা তথ্য জানতে পারছে।”