ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রীসেবায় চালু হচ্ছে হটলাইন। আগামী জুলাই মাসের মধ্যে এই হটলাইন সেবায় ২৪ ঘণ্টা যাত্রীরা মতামত বা অভিযোগ জানানোর সুযোগ পাবেন।
রাজধানীর কুর্মিটোলায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কনকোর্স হলে রোববার দুপুরে এক গণশুনানির অনুষ্ঠানে এসব কথা জানান বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান। যাত্রীসেবার মান বাড়াতে এই গণশুনানির আয়োজন করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেবিচক চেয়ারম্যান জানান, ‘হট লাইনের মাধ্যমে যে কোনো যাত্রী বা ব্যক্তি যে কোনো জায়গা থেকে বিমানবন্দরের সেবা নিয়ে অভিযোগ বা মতামত জানাতে পারবেন। যে ধরনের অভিযোগই আসুক না কেন, তা সমাধান করা হবে।’
এম মফিদুর রহমান জানান, ‘জুলাই নাগাদ এই হটলাইন সেবা চালু হবে। দিনে ও রাতে ২৪ ঘণ্টা এই হটলাইনে যাত্রীরা যে কোনো অভিযোগ ও বিমানবন্দরের সেবা নিয়ে মতামত জানাতে পারবে। এই সেবার জন্য জনবল নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সেবা দিতে কোনো কমতি রাখা হবে না।’
গণশুনানির আয়োজন নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, সরকারি সংস্থাগুলো গণশুনানি করলে আগে থেকে জানানো হয়, অথচ বিমানবন্দরের গণশুনানি হলে যাত্রীদের অংশগ্রহণ কম থাকে কেন- এই প্রশ্নের জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘গণশুনানির আয়োজন হয় অংশীজনদের নিয়ে। আগামীতে পরিকল্পনা নিয়ে ওয়েবসাইটে গণশুনানির বিষয়ে আগে-ভাগে জানানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। ১৫ দিন আগে তা জানানো হবে।’
এ সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘গণশুনানির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চালু থাকবে। বিমানবন্দরে ২৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। যাত্রীরা সাধারণত কোনো সমস্যায় পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন। হটলাইন চালু হলে যাত্রীদের ফোন নম্বরে ওই অভিযোগের ভিত্তিতে একটি টিকিট তৈরি হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে ওই অভিযোগের টিকিট দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে নিষ্পন্ন করা হবে। সবার জবাবদিহি নিশ্চিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য।’
গণশুনানিতে জাজিরা এয়ারওয়েজের ঢাকা স্টেশন ম্যানেজার রেহনুমা শেখ শাহজালাল বিমানবন্দরে একটি মেডিসিন কর্নার করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, এই উদ্যোগ নেয়া হলে যাত্রী ও বিমানবন্দরে কর্মরতদের অনেক উপকার হবে।
এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান গণশুনানিতে জানান, বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য বিভাগ আছে। তবে ওষুধের বিষয়ে পৃথক কোনো উদ্যোগ নেয়া যায় কিনা তা ভাবা হচ্ছে।
চট্টগ্রামের হজরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সালাম এয়ারের প্রায় ১ হাজার যাত্রী তাদের লাগেজ পাচ্ছে না, এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সময়মতো যাত্রী লাগেজ পাওয়া নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে মাঝে মাঝে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটে। যেসব উড়োজাহাজ সংস্থার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসছে, তাদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। ছোট আকারের উড়োজাহাজের (ন্যারো বডি) ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা বেশি হয়। কোনো এয়ারলাইনসকেই ছাড় দেয়া হবে না।’
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন বলে কয়েকটি অভিযোগ আছে, এসব অভিযোগের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হবে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, বিমানবন্দরের যারা কাজ করেন, তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। যারা যাত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন, তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে।
দুটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বিদেশফেরত যাত্রীদের বিমানবন্দরে হয়রানি করছেন। এই অভিযোগ দুটির বিষয়ে জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিস্টেম কাজ করছে বলেই এই ঘটনা দুটি জানা গেছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না, সে যে পর্যায়ের কর্মকর্তাই হোক না কেন। সবার ওপরে নজর আছে। ওই দুইজনের বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
গণশুনানির অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেবিচকের সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) এয়ার কমডোর সাদিকুর রহমান চৌধুরী, সদস্য (প্রশাসন) মো. মাহবুব আলম তালুকদার, সদস্য (নিরাপত্তা) গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সালেহ মাহমুদ মান্নাফী, প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল মালেকসহ অন্যরা।